ঢাকা ০৩:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুলিশ সদস্যকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা সেই সাহসী নারীর গল্প

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৯:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৬
  • ২৪৩ বার

পুলিশ সদস্যকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা সেই সাহসী নারী হাবিবার গল্প হয়তো অনেকেই জানেন। এমন সাহসী কন্যা ক’জনাইবা আছে আমাদের দেশে। সেই হাবিবা জান্নাত বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি।

বৃহস্পতিবার পয়লা বৈশাখের দিন সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তার গায়ে হাত দিতে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি গালি দেন পুলিশ কনস্টেবল রুহুল আমিন। এরপরই সেই সাহসী কন্যাসহ অন্য শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেন।

বাধ্য করা হয় ওই কনস্টেবলকে ক্ষমা চাইতে। লিখিতভাবেও আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান, প্রাণ পরিসংখ্যান ও তথ্য পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তরের এই শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে জানান, পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা ওইদিন সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধভাবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তিনি জানান, সারাদিনের বৈশাখের উৎসব শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমরা রাজু ভাস্কর্যের একপাশে এসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে আবার গোটা ক্যাম্পাস টহল দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।

ওই সময় সেখানে অবস্থানরত এক পুলিশ কর্মকর্তা ওই জায়গায় এসে আমাদের সরে যেতে বলেন। পুলিশের আইজির গাড়িকে জায়গা করে দেয়ার কথা বলে রুহুল আমিন নামের এক পুলিশ কনস্টেবল আমার গায়ে ধাক্কা দেন।

হাবিবা জানান, উপস্থিত ছাত্র ফেডারেশনের বন্ধুদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওই পুলিশ সদস্য আমাকে উদ্দেশ করে অশালীন ভাষায় গালি দেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে পাকড়াও করেন ছাত্র ফেডারেশনের কর্মীরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হন পুলিশের কর্মকর্তারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। তাদের বিষয়টি জানানোর পর তারা মৌখিকভাবে এর নিষ্পত্তি করতে চান। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল, লিখিতভাবে এর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।

তিনি জানান, পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাবখানা ছিল এমন, স্যরি বললেই বিষয়টা শেষ হয়ে যাবে। পুলিশের এ অশালীন আচরণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভের মুখে নতি স্বীকার করে প্রক্টরের কার্যালয়ে ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতাকর্মী ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, পুলিশের রমনা জোনের ডিসি, এডিসি, শাহবাগ থানার ওসি ও পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা। এরপর দাবি অনুযায়ী লিখিতভাবে ক্ষমা চান ওই রুহুল আমিন। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।

হাবিবা জানান, তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে গত পাঁচ বছর ধরে যুক্ত আছেন। যে সমাজে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা থাকবে এ চেতনাকে সামনে রেখেই আমাদের সংগ্রাম। ব্যক্তিগতভাবে আমি একক সাহসিকতার চেয়ে সামগ্রিক সাহসিকতায় মোকাবিলা করতে চাই।

তিনি জানান, প্রতিবাদের মুখে তারা ক্ষমা চেয়েছেন, ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি বা নারী তাদের নিপীড়নের শিকার হলে এ সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনাটুকুও পাওয়া যায় না। নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে নারী-পুরুষ সবারই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। এর কোনো বিকল্প নেই।

হাবিবা জান্নাত জানান, যে সরকার নারীবান্ধব নয়, ওই সরকারের কাছে প্রতিকার পাওয়ার আশা স্রেফ অন্ধের কাছে পথের দিশা চাওয়া আর ছাড়া কিছুই নয়। সংগ্রামের ভেতর থেকে গড়ে ওঠা জনগণের পক্ষের শক্তিই পারে নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পুলিশ সদস্যকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা সেই সাহসী নারীর গল্প

আপডেট টাইম : ১১:১৯:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

পুলিশ সদস্যকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা সেই সাহসী নারী হাবিবার গল্প হয়তো অনেকেই জানেন। এমন সাহসী কন্যা ক’জনাইবা আছে আমাদের দেশে। সেই হাবিবা জান্নাত বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি।

বৃহস্পতিবার পয়লা বৈশাখের দিন সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তার গায়ে হাত দিতে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি গালি দেন পুলিশ কনস্টেবল রুহুল আমিন। এরপরই সেই সাহসী কন্যাসহ অন্য শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেন।

বাধ্য করা হয় ওই কনস্টেবলকে ক্ষমা চাইতে। লিখিতভাবেও আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান, প্রাণ পরিসংখ্যান ও তথ্য পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তরের এই শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে জানান, পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা ওইদিন সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধভাবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তিনি জানান, সারাদিনের বৈশাখের উৎসব শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমরা রাজু ভাস্কর্যের একপাশে এসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে আবার গোটা ক্যাম্পাস টহল দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।

ওই সময় সেখানে অবস্থানরত এক পুলিশ কর্মকর্তা ওই জায়গায় এসে আমাদের সরে যেতে বলেন। পুলিশের আইজির গাড়িকে জায়গা করে দেয়ার কথা বলে রুহুল আমিন নামের এক পুলিশ কনস্টেবল আমার গায়ে ধাক্কা দেন।

হাবিবা জানান, উপস্থিত ছাত্র ফেডারেশনের বন্ধুদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওই পুলিশ সদস্য আমাকে উদ্দেশ করে অশালীন ভাষায় গালি দেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে পাকড়াও করেন ছাত্র ফেডারেশনের কর্মীরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হন পুলিশের কর্মকর্তারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। তাদের বিষয়টি জানানোর পর তারা মৌখিকভাবে এর নিষ্পত্তি করতে চান। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল, লিখিতভাবে এর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।

তিনি জানান, পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাবখানা ছিল এমন, স্যরি বললেই বিষয়টা শেষ হয়ে যাবে। পুলিশের এ অশালীন আচরণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভের মুখে নতি স্বীকার করে প্রক্টরের কার্যালয়ে ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতাকর্মী ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, পুলিশের রমনা জোনের ডিসি, এডিসি, শাহবাগ থানার ওসি ও পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা। এরপর দাবি অনুযায়ী লিখিতভাবে ক্ষমা চান ওই রুহুল আমিন। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।

হাবিবা জানান, তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে গত পাঁচ বছর ধরে যুক্ত আছেন। যে সমাজে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা থাকবে এ চেতনাকে সামনে রেখেই আমাদের সংগ্রাম। ব্যক্তিগতভাবে আমি একক সাহসিকতার চেয়ে সামগ্রিক সাহসিকতায় মোকাবিলা করতে চাই।

তিনি জানান, প্রতিবাদের মুখে তারা ক্ষমা চেয়েছেন, ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি বা নারী তাদের নিপীড়নের শিকার হলে এ সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনাটুকুও পাওয়া যায় না। নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে নারী-পুরুষ সবারই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। এর কোনো বিকল্প নেই।

হাবিবা জান্নাত জানান, যে সরকার নারীবান্ধব নয়, ওই সরকারের কাছে প্রতিকার পাওয়ার আশা স্রেফ অন্ধের কাছে পথের দিশা চাওয়া আর ছাড়া কিছুই নয়। সংগ্রামের ভেতর থেকে গড়ে ওঠা জনগণের পক্ষের শক্তিই পারে নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে।